Friday, December 8, 2017

চিঠি কিংবা আত্মরতি : ১

ধরো বহুদিন কিছু লিখিনা তো, মানে লিখতে শুরু করিনা যে তা নয়, মাঝপথে বিরক্তিরা ভীড় করে আসে। শুধু বিরক্তি নয়, ধরো অসহায় ভাব আসে একটা, কি হবে? কতদিন কবিতা পড়িনা, ভয় হয়, একটা ভালো লাইন পড়ে ছিটকে যাই যদি আগের মতন? বহুদিন আগে লিখেছিলাম, সে ভীষণ মন কেমনিয়া মেঘ করেছিল আকাশের কোণে, বালিকা নাকছাবি তার, ফেলে এলো হলুদের বনে। নাকছাবি কেন বলতো? সীতাহার হতে পারতো, বাউটি কিংবা ভয়ানক দামী অন্য কিছু? কিন্তু সে মেয়েটি শুধু নাকছাবিটিই ফেলে এসেছে তার দয়িতের জন্যে, সেটুকুই তার সর্বস্ব, অথচ সে প্রেমিক আসেনি আর ফিরে, বালিকার মন উচাটন। এই যে ধরো লিখেছিলাম, এটাও নিজের কথা কি? কোথাও ছিল নিশ্চয়ই । আগে এক একটা কবিতার পংক্তির সাথে ঘোরতর লড়াই হতো, কেন লিখলে এরকম? কেন হে তোমার ঈশ্বর থাকেন জলে, স্থলে কিংবা অন্তরীক্ষে নয়? আর সেই যাপনের দিন নেই, রোদনের রাত্রি নেই, একটা স্ক্রিনে পেপার খোলা থাকে আর একটা স্ক্রিনে কোড, রাত্রে কিছু একটা খাওয়া, দু এক পশলা নেটফ্লিক্স কিংবা নীল ছবি, তারপর শ্রান্ত ঘুম আসে, সেও তেমন নিশ্ছিদ্র নয় আজকাল, মাঝে মাঝে চমকে জেগে উঠি, এতো ভয়ানক দৌড়োচ্ছে সবাই, পারবো তো? রবীন্দ্রসংগীত শুনিনা কতদিন! ওই যে জতুগৃহ না কি একটা সিনেমা ছিলোনা, ভদ্রমহিলা গাইছেন আমার যে সব দিতে হবে সেতো আমি জানি, আমার যত বিত্ত প্রভু আমার যত বাণী, চোখ বন্ধ করলে সেইটা মাঝে মাঝে শুনতে পাই, আর দেখতে পাই আধো অন্ধকার সব ধানক্ষেত বুঝলে কিংবা গমক্ষেত কিংবা শশার বাগান তা কি ছাই আমিই জানি, কিন্তু সেসব ছিঁড়ে খুঁড়ে ছুটে যাচ্ছে একটা ট্রেন, স্লিপারের জানালায় বসে একটি কিশোর নির্নিমেষ গিলছে সেই বিমর্ষ নৈঃশব্দ্য, ধরো জ্যোৎস্নায় তার মসৃণ গাল এর আধখানা দ্যূতিময়, তার মন খারাপ, বাবা মার ঝগড়া হয়েছে আবার, কিন্তু এই মাঝরাতে তার হঠাৎ ভীষণ ভীষণ ভালো লাগছে। প্রিয়তমেষু, আমি সেই ছেলেটির কাছে ফিরে যাবো। 

ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম? লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝরে যায়।   

বিনয় মজুমদার 

ভালোবাসা দিতে পারি, তোমরা কি গ্রহণে সক্ষম?
লীলাময়ী করপুটে তোমাদের সবই ঝ’রে যায় –
হাসি, জ্যোৎস্না, ব্যথা, স্মৃতি, অবশিষ্ট কিছুই থাকে না।
এ আমার অভিজ্ঞতা। পারাবতগুলি জ্যোৎস্নায়
কখনো ওড়ে না; তবু ভালোবাসা দিতে পারি।
শাশ্বত, সহজতম এই দান — শুধু অঙ্কুরের
উদগমে বাধা না দেওয়া, নিষ্পেষিত অনালোকে রেখে
ফ্যাকাশে হলুদবর্ণ না ক’রে শ্যামল হতে দেওয়া।
এতই সহজ, তবু বেদনায় নিজ হাতে রাখি
মৃত্যুর প্রস্তর, যাতে কাউকে না ভালোবেসে ফেলি।
গ্রহণে সক্ষম নও। পারাবত, বৃক্ষচুড়া থেকে
পতন হলেও তুমি আঘাত পাও না, উড়ে যাবে।
প্রাচীন চিত্রের মতো চিরস্থায়ী হাসি নিয়ে তুমি
চ’লে যাবে; ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় স্তব্ধ হব আমি।