Monday, April 13, 2015

অঞ্জন দত্ত Anjan Dutta

অঞ্জন দত্তের গান ভালো লাগে, এই নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে থাকি। কাউকে বলতে পারিনা। মানে রবীন্দ্রসঙ্গীত, চন্দ্রবিন্দু, সুমনের গান ভালো লেগেও যে ওটা মোটামুটি ভালো লাগা যায়, এইটা লোকজন বিশ্বাস করতে চায়না। আজ সাহস করে বলে দিলাম। ক্যাথার্সিস।

 আমি সুর বুঝিনা, অলমোস্ট একেবারেই না।  সুতরাং গান শোনাটা প্যাশনের দিক থেকে।  আমার নয়, শিল্পীর প্যাশন। এই ব্যাপারটা আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবোনা। কনেক্ট করা বললে কাছাকাছি যাবে বোধ হয়। কন্ঠ, সুর, লিরিক সব মিলিয়ে যেটা থাকে, আবার সেটাকে ছাপিয়ে যায়।  "খন্ডন ভব"তে যাকে বলা হচ্ছে নির্গুণ গুণময়। একটা আহ্বান। সেটা কখনো মুষ্টিবদ্ধ হাত, কখনো গলার কাছে দমচাপা কষ্ট, আবার কখনো নিজেকে আইদেন্টিফাই করতে পারা। যেমন একদিন বৃষ্টিতে হয়ত দেখা হবে, উড়ে যাবে ছাতা, জুতো, মুছে যাবে সিঁদুরের টিপ। এই গানটার মধ্যে আমি একটা বন্য প্রেমের ইমেজারি পাই। কিংবা আরেকটা ঝড়ের দিন যেদিন সারা কোলকাতা কেনার নেশায় পাগল। কিনতে হবে বলেই কিনে ফেলল সোমনাথ খ্যাপা শহরের রাস্তাঘাট। আমার কাছে গড়িয়াহাটার মোড়, মেট্রো সিনেমারর সামনের ফুটপাথ সব মিলে মিশে যায়।  চোখ ধাঁধানো ঐশ্বর্যের পাশ কাটিয়ে, এগরোলএর গন্ধ মাখা নিভু নিভু আলোর ভারী গরীব একটা শহরের জলছবি উঠে আসে। সেই গোলপার্কের মৌচাক আছেনা, তার পাশের গলিটা। সেটাই আমার কোলকাতা।

তবে অঞ্জনের সেরা বিচ্ছুরণ বোধ হয় আত্মনিপীড়নের বা চিরন্তন হতাশার গল্পে। যেখানে স্যামসন একলা একলা মাঝরাতে ফিরে আসে চিলেকোঠার ঘরে, একলা বিছানায়, মদে ভিজে। ডেলায়লা কে কথাটা বলা হলনা কোনদিন। এটাও একভাবে আমার গল্প। নোনা দেওয়াল থেকে যীশু ছলছল চোখে হাত তুলে আশ্বাস দেয় এখনো। কিংবা সব পেয়েও নিজেকে অবিশ্বাস করে যাওয়ার যন্ত্রণা? নিজের গানের সব কথা, লাগবে আবার ছাপোষা। এ কথা যখন বলছেন, তখন অঞ্জনের বেলা বোস বেরিয়ে গিয়েছে। শহুরে মধ্যবিত্ত জানে রাস্তার ধারে শস্তা হোটেলে বদ্ধ কেবিনে বন্দী থাকার যে অনুভব, তার ব্যালাড গাওয়ার লোকটি চলে এসেছেন এ কোলকাতায়। তবু ভয়াবহ অপ্রাপ্তি তাড়া করে বেড়ায় অঞ্জনকে, যেটা সত্যিই হওয়া উচিত যে কোনো শিল্পীর। কিন্তু কতজন সে কথা মেনে নেন? নিজের লিমিটেশন স্বীকার করার কুন্ঠাহীন এই উচ্চারণ আমার ভীষণ কাছের। প্রিয় বন্ধুর কথা আর বললামনা। যাকগে, কে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে।

সুতরাং, সব শেষে, অঞ্জন খুব বেশি পার্সোনাল। সুমন চন্দ্রবিন্দু আমি লোকজন কে ডেকে শুনিয়েছি। অঞ্জন খুব ঘোরতর ভাবে একান্ত। যার ভালো লাগবে, লাগবে। বেশির ভাগ লোকেরই লাগবেনা। যাদের লাগবে, তাদের কখনো কখনো একটি দুখী মানুষকে মনে পড়বে, যে গিটার নিয়ে একা একা গান গায় নিউ ইয়র্কের সাবওয়ে তে, রাত্রি শেষে অন্ধকার এফ ট্রেন ধরে জামাইকায় ফেরে চুপচাপ। সুনীল গাঙ্গুলী বলে গেছিলেন, ভ্রু পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে। আমার মনে হয় খুব কমজনই অঞ্জনকে সেই ডাকটা দিতে চায়। আমি সেই ডাকটা দিয়েছিলাম। সুতরাং, এ চন্দনের বন, এ কোলকাতা ষোলো, আমার। একমাত্র আমারই। 

No comments: