Sunday, November 21, 2021

পপ কালচার, বাংলা সিনেমা

 বেশ কিছুদিন ধরে আমি ভাবছিলাম যে মানুষ এর ভ্যালু সিস্টেমকে এফেক্ট করা প্রায় অসম্ভব। উপরন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, যাতে আপনি কমফোর্টেবল ফিল করেন সেটাই চোখের সামনে আসে। এই বাবল এফেক্ট নিয়ে বিস্তর লেখালিখি হয়েছে। আমার ক্রমশঃই মনে হচ্ছিলো যে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক জিনিসপত্র নিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন আদতে বৌদ্ধিক আত্মরতি। সময়বিশেষে মাস্টারবেশন অবশ্যই একটা ভালো স্ট্রেস রিলিজ, কিন্তু অন্য কারো জীবন এ তো এর কোনো এফেক্ট নেই!  


এই রকম সংশয়ের সময়ে, প্রায় অলৌকিক ভাবে ইউটিউব আমাকে একটি ভিডিও রেকমেন্ড করে। ভিডিওটি অসম্ভব ইরোটিক, আমি বিস্তৃত বিবরণে যাবোনা, তলায় লিংক আছে। শুতে যাওয়ার আগে অত্যন্ত ক্যাজুয়ালি ভিডিওটি চালিয়ে আমি প্রায় রুদ্ধশ্বাসে উঠে বসি, কারণ ভিডিওটি আশ্চর্য রকম ভাবে এন্টারটেনিং। ভিডিওর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক মহিলা, বেশ প্রভোকেটিভলি ড্রেসড, একা কথা বলে যাচ্ছেন। অস্বীকার করে লাভ নেই, মহিলাটি এতটা এট্রাকটিভ না হলে আমি হয়তো ভিডিওটি চালিয়েও দেখতাম না। সব মিলিয়ে, ভিডিওটি সস্তা থ্রিলারের মতন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চুম্বকের মতো টেনে রাখে।   


এবিগেল থর্ন ফিলোসফি টিউব বলে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান, যার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১.৫ মিলিয়ন, মানে পনেরো লক্ষ। পনেরো লক্ষ লোক তাঁর ভিডিওর জন্যে অপেক্ষা করে থাকে, যে ভিডিওর বিষয় হলো রিলেটিভিসম কিংবা এস্থেটিক্স। আমি যে ভিডিওটি প্রথম দেখি, তার বিষয় ছিল সোশ্যাল কন্সট্রাক্ট। এর পরে আমি বেশ তাড়াহুড়ো করেই এবিগেল এর অন্য ভিডিওগুলো দেখে ফেলি। 


প্যারাডক্স এখানেই যে আমি এবিগেল এর ভিডিও দেখেছি বিনোদনের একটা সোর্স হিসেবে, শুধুমাত্র জানার জন্যে নয়। এবিগেল পপ কালচার আইকন। তিনি জানেন সেক্স বিক্রি হয় সবচাইতে বেশী। শিল্প যত সস্তা, যত কম সেরিব্রাল এবং বেশী এন্টারটেইনিং, ততই বেশী সংখ্যক তার উপভোক্তা। কিন্তু এই সত্যিটাকে তিনি অস্ত্রের মতন ব্যবহার করেন। দু পয়সার নৌটঙ্কি দেখতে এসে মানুষ জিনিওলজি অফ মোরালিটির পাঠ নিয়ে ফিরে যায়।   


এবিগেল এর ভিডিও আমাকে পপ কালচার নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। পপ কালচার এর সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম আমি মনে করি সিনেমাকে। ঋত্ত্বিকই না বলে গেছিলেন সিনেমা করি কারণ তাতে সবচেয়ে বেশী মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়? এটা একটা অদ্ভুত মিডিয়াম। একটা বইতে লেখক তাঁর চিন্তা ভাবনা পাঠকের সঙ্গে ডিরেক্টলি কমিউনিকেট করতে পারেন। সিনেমাতে সেই সুযোগ নেই, কিন্তু পার্সপেক্টিভ এর ব্যবহার এর সুযোগ আছে। একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে রাখি। গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা, কূলে একা বসে আছি নাহি ভরসা। সিনেমাতে প্রথম লাইনটা দেখানো সহজ। বৃষ্টি পড়ছে, মেঘে ঢাকা আকাশ। কিন্তু "নাহি ভরসা"র মধ্যে যে অসহায়তা রয়েছে সেইটা? এইবারে একটা ছবি কল্পনা করুন যেখানে একটা দিগন্তবিস্তৃত নদী দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে একটা কোণে একটা বিন্দু, যাকে মানুষ বলে চেনা যায়, কিন্তু খুব আবছা ভাবে। এই দূরত্ব, এই বিশালত্বের মধ্যে একটা ছোট্ট প্রেসেন্স, এইটা ইম্পরট্যান্ট। এটা আপনার মধ্যে একটা একাকিত্বের, ভরসাহীনতার সেন্স তৈরী করছে। এর পরে ক্যামেরা জুম করছে সেই বিন্দুর দিকে, আপনি মানুষটির মুখ দেখতে পাচ্ছেন, যেখানে একটা অসহায়তার ভাব ফুটে উঠছে। ফাইনালি, ক্যামেরা মানুষটির মুখ থেকে সরে ফোকাস করছে নদীর দিকে, সীমাহীন পারাপার। এইবার আপনার কাছে পুরোটা পরিষ্কার। একটি একাকী মানুষ সমুদ্রতীরে। বিষাদ ভারাক্রান্ত। প্রসঙ্গক্রমে, এই সিকোয়েন্সটি মনপুরা সিনেমার। 


সুতরাং সিনেমা, এট দ্য ভেরি লিস্ট, মানুষকে সাব কনশাশলি এফেক্ট করার একটা প্রসেস। পরিচালক অনেক কিছুই বলছেন, কিন্তু সোজাসুজি না। মোর ইম্পোর্ট্যান্টলি, পরিচালকের হাতে সুযোগ আছে এই প্রসেসটা কন্ট্রোল করার। এটা একটা আশ্চর্য ক্ষমতা। আপনি যদি লেখেন রহিম জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে দিল, একটা হুলুস্থুলু পড়ে যাবে। কিন্তু একটা ফ্রেমে জাতীয় পতাকার ছবি ও পরের ফ্রেমে আগুন দেখালে আপনি কমপ্লিটলি সেফ। এই নয় যে বইতে বা নাটকে এই সাবটেক্সট থাকেনা, কিন্তু আমার পার্সোনালি মনে হয় সিনেমার ভেরি প্রসেসটাই যেমন সাবটেক্সট এর উপরে নির্ভর করে, অন্য মিডিয়ামে অতটাও নয়।


এখনো অব্দি দুটো জিনিস লিখেছি। পপ কালচার এর মধ্যে দিয়ে কিভাবে ইম্পরট্যান্ট মেসেজ এক্সপ্রেস করা যায় যা মানুষের ভ্যালু সিস্টেমকে এফেক্ট করতে পারে। এবং সিনেমা কিভাবে সাবকনসাসলি একটা মেসেজ ডেলিভার করে থাকে। যেটা বাকি রয়ে গেছে, সেটা হচ্ছে একটা কনেকশন। পপুলার কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমা সাবকনসাসলি কি মেসেজ আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফড়িং কিংবা সহজ পাঠের গল্প: বেশ কিছু মাস্টারপিস এই রিসেন্ট সময়ে তৈরী হয়েছে, আমি সেগুলোর কথা বলছিনা। আমি বলছি কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমা, বিজলি মিনার ছবিঘর কিংবা মফঃস্বলের হলে আলো জ্বালানো সিনেমার কথা। আমি জেনেরালাইজেশন করবো না কারণ সিনেমা আমার জীবিকা নয়, সুতরাং আমি খুব বেশী সিনেমা দেখিনা, বা আমার সিনেমা দেখার কোন ফর্মাল ট্রেনিংও নেই। প্রকৃত অর্থেই আমি এই আলোচনার অনধিকারী। কিন্ত দুটো সিনেমার, আরো স্পেসিফিকালি, দুটো গানের কম্পারিসন করে আমার যা মনে হয়েছে, সেটুকু লিখে রেখে যাই। সিনেমা শিক্ষিত লোকজন বিচার করবেন।  

  

বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে ভারতের সবচেয়ে বড় অবদান আইটেম ডান্স। পাঁচ থেকে দশ মিনিটের একটা সঙ্গীত ও নৃত্য মুখর সিকোয়েন্স, যার সঙ্গে একচুয়াল সিনেমার গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই, এবং প্রায়শঃই গোটা সিনেমার কলা কুশলীদের ও কোনো সম্পর্ক নেই, সেরকম একটা জিনিস যে সিনেমাতে রাখা যেতে পারে শুধু বিনোদনের জন্যেই, এটা বলিউডের আগে কেউ করে দেখিয়েছে বলে মনে হয়না। ক্রিটিকদের ইউনিভার্সাল ঘৃণার এবং সাধারণ দর্শকের অবিমিশ্র ভালোবাসার এক দুর্ধর্ষ ককটেল, হোয়াট ইস মোর পপ কালচার দ্যান আইটেম ডান্স?


দুটো আইটেম সং আমি রিসেন্টলি খুব মন দিয়ে দেখেছি। প্রথমটা হচ্ছে একটা বাংলা সিনেমার যার নাম কেলোর কীর্তি। হিন্দিতে নো এন্ট্রি বলে একটা সিনেমা হয়েছিল। এই সিনেমাটি তার বাংলা ভার্সন। বাংলা গানটির নাম "হাটে বাজারে", এটি অরিজিনাল হিন্দি সিনেমাটির একটি গানের রিপ্লেসমেন্ট, যেটির নাম ছিল "ইশক দি গালি ভিজ নো এন্ট্রি"। বাংলা গানটির সুরকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, লিরিসিস্ট প্রসেন, গেয়েছেন মধুবন্তী বাগচী, রানা মজুমদার ও কোরাস। নাচে মুখ্য ভূমিকায় নুসরত জাহান, দেব ও যীশু সেনগুপ্ত। আরেকটি গান অপেক্ষাকৃত বেশী বিখ্যাত। "দাবাং" সিনেমার এই গানটির নাম "ফেভিকল সে"। সুরকার গীতিকার সাজিদ ওয়াজিদ, গেয়েছেন ওয়াজিদ ও মমতা শর্মা। নাচের মূল কুশীলব করিনা কাপুর, সলমন খান ও আরবাজ খান।     

 

প্রথম প্রশ্ন হলো কম্পারিসন কেন বাংলা ও মূল হিন্দি গানের মধ্যে নয়। এই দুটো গান স্ট্রাকচারালি আলাদা। বাংলা গানটি নুসরতের ক্যারেক্টার (আমি এর পর থেকে এনাকে নুসরাত হিসেবেই লিখবো, কারণ আমি সিনেমাটা দেখিনি, সুতরাং ক্যারেক্টার এর নাম জানিনা) এর পার্সপেক্টিভ থেকে লেখা:  "হাটে বাজারে বেড়েছে বেজায় গরম, আমি যেইনা দুলিয়েছি কোমর নরম"। হিন্দি গানটির সেরকম কোন পার্সোনাল বক্তব্য নেই, বলা হচ্ছে প্রেমের গলিতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এই জন্যেই দ্বিতীয় গানটি চয়েস করা, যেটি শুরু হচ্ছে এইভাবে "আংড়াইয়া লেতি হুঁ ম্যায় জব জোর জোর সে", অর্থাৎ করিনার পার্সপেক্টিভ থেকে।


গানদুটির লিরিক্স এর সামান্য ভাষাতাত্বিক বিশ্লেষণ করলেই দেখা যায় যে প্রথম গানটিতে দ্য এজেন্সি লাইজ উইথ নুসরাত। অর্থাৎ যা ঘটনা ঘটছে, তার পুরোটার কন্ট্রোল নুসরাতের হাতে। নুসরাত বলছেন কোমর দুলিয়েছি আমি, তার কন্সিকোয়েন্স এ বেড়েছে গরম। "আমারই সব দোষ, পোষায়না উপোস"। "পোষায়না উপোস" একটা আশ্চর্য শক্তিশালী ফ্রেজ। কমার্শিয়াল বাংলা সিনেমা, যার টার্গেট অডিয়েন্স গ্রাম মফস্বলের বাঙালি, সেখানে ফিমেল সেক্সুয়ালিটির এমন দ্বিধাহীন উদযাপন বিরল। এবং বিস্ময়কর ভাবে, এই থিমটা গোটা গান জুড়ে চলতে থাকে। "তাও আজ তোর সাথে জ্বলে পুড়ে যাবো, বলে বলে তোর কাছে আমি কেস খাব"। "তোর কাছে" কথাটা লক্ষ্যণীয়। বা "কত যে শহীদ আছে তোর নামে লেখা/ তাকালে কারেন্ট লাগে ছুঁয়ে দিলে ছ্যাঁকা"। এই প্রেমে নুসরাত ভিকটিম নন, বা তাঁর উপরে মেল ক্যারেক্টারদের স্যাটিসফাই করার দায়িত্বও নেই। তিনি এক্সিস্ট করেন প্রায় দেবত্বে, আফ্রোদিতির মতন। তাঁর সেক্সুয়ালিটি থেকে মেল্ ক্যারেক্টাররা প্লেজার ডিরাইভ করতে পারে, কিন্তু তিনি নিজে তাদেরকে সেই প্লেজার দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।


এর বিপ্রতীপে দেখি "ফেভিকল সে"র লিরিক্স। প্রথম কয়েকটি পংক্তি প্রায় অক্ষর এ অক্ষরে অনুবাদ। আমি যে দিকে যাই, হাঙ্গামা বেধে যায়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় তার কয়েক লাইন পরেই। তোমার (পড়ুন মেল গেজ) এর স্যাটিস্ফেকশন এর জন্যে আমি আত্ম নিবেদন করতে তৈরী, আমাকে মিসড কল দিয়ে "পটিয়ে নাও"। এইখানে এজেন্সি সরে যায় করিনার থেকে মেল ক্যারেক্টারদের দিকে, এবং সেটা পরের লাইন গুলো জুড়ে চলতে থাকে। "তন্দুরি মুর্গি" লাইনটি বহু জায়গায় নিন্দিত হয়েছে, কিন্তু আমার মনে হয় তার চেয়ে ঢের অফেন্সিভ হলো এই গানের ওভারঅল থিম। প্রায় ত্রিশ পংক্তির গানে করিনা বহুবার পাওয়ার রেটোরিক ব্যবহার করেন: তাঁর যৌবন ধারালো, তিনি বরফে আগুন লাগাতে পারেন। কিন্তু সেই পজিশনেও তিনি নিজের প্রয়োজনের কথা বলেন না, বরং বিভিন্ন ইমেজারির মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন মেল স্যাটিস্ফেকশনের জন্যে বাবহৃত হওয়াতেই ফিমেল সেক্সুয়ালিটির সার্থকতা। 


যাঁরা গান লেখেন তাঁরা নিশ্চিত ভাবেই গানের পিকচারাইজেশন এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। কিন্তু বিস্ময়কর ভাবে, লিঙ্গুইস্টিক এজেন্সির এই থিমাটিক পার্থক্য কোরিওগ্রাফিতে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কোইন্সিডেন্টালি, দুটি গানেরই ৭ সেকেন্ডে আমরা মেন্ ক্যারেক্টারদের দেখি। প্রথম গানে ক্যামেরা ফোকাস করে নুসরাত এর মুখের উপরে, দ্বিতীয় গানে করিনার পিঠের উপরে। একটা অবভিয়াস পার্থক্য হলো প্রথম গানে এটা ইমিডিয়েটলি এস্টাব্লিশড হয় যে গানটির ফোকাস নুসরাত, দ্বিতীয় গানে করিনা একটি বিউটি মিথকে রিপ্রেজেন্ট করছেন, ওনার জায়গায় অন্য যে কেউ থাকতে পারতেন। কিন্তু আর একটা সাটল ডিফারেন্স রয়েছে। ক্যামেরা যখন নুসরাতের মুখের উপরে ফোকাস করে, তখন আমরা দেখছি এই সিচুয়েশনে নুসরত কিভাবে রিয়্যাক্ট করছেন। অর্থাৎ দর্শক গানটা নুসরাতের পার্সপেক্টিভ থেকে দেখতে শুরু করছেন, একদম প্রথম শটেই এজেন্সি এস্টাব্লিশড হয়ে যাচ্ছে। আমি জানিনা সেটা চয়েস না একসিডেন্ট, কিন্তু প্রথম গানে জুম্ শটের ব্যবহার অত্যন্ত বেশী, প্রথম এক মিনিটের মধ্যে ক্যামেরা অন্ততঃ পাঁচবার এক্সক্লুসিভলি নুসরাতের মুখের উপরে জুম করে। ৪ মিনিট ৩০ সেকন্ড লম্বা গোটা দ্বিতীয় গানে একটি মাত্র সিনে আমরা করিনার ফেস শট দেখতে পাই, ক্যামেরা কখনোই তাঁর বুকের উপরে ওঠেনা।  


গানদুটিতে প্রথম যে দুটি শটে আমরা মেল ও ফিমেল ক্যারেক্টারদের একসাথে দেখতে পাই, সে দুটি ওয়াইডলি ডিফারেন্ট। প্রথম গানে ক্যামেরা দেব ও নুসরাতকে একই প্লেনে ধরে, তাঁরা পাশাপাশি, একই উচ্চতায়, এবং ফোকাসের সামান্যই পার্থক্য। দ্বিতীয় গানে, প্রায় দশ সেকেন্ড ধরে আমরা সালমান খানকে দেখি, প্রায় সাররিয়েল ভাবে, করিনার কটিদেশ ও নিতম্বের ফাঁক দিয়ে। মেল্ ও ফিমেল ক্যারেক্টার এর এরকম প্রোনাউন্সড সাব্জেক্টিফিকেশন ও অব্জেক্টিফিকেশন নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। গানটি যখন আমি প্রথম দেখি, তখন এটা আমি মিস করে গেছিলাম, অর্থাৎ এটা আমার মধ্যে রেজিস্টারই করেনি। এই ব্যাপার এ আমরা কিরকম ডিস্যানিটাইজড হয়ে গেছি ভাবা যায়! যাই হোক, এজেন্সি, আবার। 


সব মিলিয়ে, দ্বিতীয় গানটি ট্র্যাডিশনাল যৌনতা বিক্রি করছে সমাজের দাবী মেনে। কিন্তু প্রথম গানটি, সেই বিক্রির সাথে সাথেই, অত্যন্ত সাবভার্সিভ ভাবে, ভারী শক্তিশালী অল্টারনেটিভ ফেমিনিস্ট ভিউ রেখে যাচ্ছে দর্শকের মনে। অস্কার ওয়াইল্ড বলেছিলেন সেক্স ইস এবাউট পাওয়ার। সেই ট্র্যাডিশনাল পাওয়ার ইকুয়েশনটা উল্টে দিচ্ছে, অফ অল থিংস, একটি আইটেম সং। এইটাই পিওর জিনিয়াস। আমি বাংলা ও হিন্দি সিনেমার আইটেম সং এর কম্পারিজন করছিনা, যদিও সেটা পরে কখনো করার ইচ্ছে আছে। আমার বক্তব্য অন্য। এক্সপ্লিসিটলি ফিমেল পাওয়ার সেলিব্রেট করার গান পপুলার হিন্দি সিনেমাতেই রয়েছে, ব্রেক আপ সং, অনুষ্কা শর্মা ছিলেন মনে হয়। কিন্তু মানুষ আইটেম সং এ তার সোশিয়োপলিটিকাল চিন্তা ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করতে যাচ্ছেনা, বরং তার উল্টোটাই করতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি দেখাতে চাই যে তার মধ্যেও সাবভার্সন সম্ভব, তার মধ্যেও মানুষকে সাবকনসাসলি অন্য রকম ভাবে চিন্তা করতে শেখানো সম্ভব। এবং বাংলাতেই সেই কাজ হচ্ছে।


ফাইনালি, আমি বিশ্বাস করি একটা মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়া আর্ট মিনিংলেস। সেই জন্যেই, আমি প্রার্থনা করি, ফর্মের চক্রান্তে আমরা যেন না পড়ি। পপ কালচার এর অযুত সম্ভাবনার কথা আমরা যেন ভুলে না যাই। কিয়োরোস্তমির সিনেমা দেখতে গিয়ে আমরা যেন রাজ্ চক্রবর্তীকে অবজ্ঞা না করি। গোর্কির লেখা দিয়ে বিপ্লব শুরু হলে ভালো হতো, কিন্তু এই সময়ের মানুষ, আমার প্রতিবেশী, যদি গোর্কি না পড়ে, আমরা যেন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিই। বরং তার ড্যান ব্রাউন/সিডনি শেলডন লাইব্রেরিতে আমরা যেন গোর্কির বীজ পুঁতে দিয়ে আসতে পারি। 


ঋণস্বীকার: রণদীপ নস্কর বলে একটি বাচ্ছা ছেলে আমার ফেসবুক প্রোফাইলে আছে। ওকে ট্যাগ করে বিব্রত করলাম না। আমার সিনেমা দেখা, এস্পেশালি পপুলার সিনেমা দেখতে শেখা সম্পূর্ণ ভাবে ওর লেখা পড়ে। এই ছেলেটি বড়ো হয়ে যদি ফিল্ম মেকার বা ক্রিটিক না হতে পারে, এই সমাজের জন্যে অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার হবে।


No comments: